Title Text
অঙ্কন: আবুল বাশার শেখ
আজ এই বিশেষ দিনে যখন আমি আমার মা’কে নিয়ে লিখছি তখন আমার মা আমার থেকে খুব বেশি দূরত্বে নয় মাত্র দুই হাত, তারপরও আমার মায়ের কি অবস্থা তা আমি জানিনা। আমার বেহেস্ত স্নেহময়ী মা আমাকে চিরতরে এতিম করে না ফেরার দেশে তাঁর আপন মানুষ আমার বাবার কাছে চলে গেছেন গত দুই বছর আগে। মায়ের শূন্যতা পূরণ করার মতো কোন রাস্তা মহান আল্লাহ এই পৃথিবীতে মনে হয় রাখেননি যদি রাখতেন তাহলে যারা মা হারিয়েছেন তারা যে কোন কিছুর বিনিময়ে হোক অবশ্যই এই শূন্যতা পূরণ করতেন। মা’কে নিয়ে লিখতে গেলে লেখা কোন দিন শেষ হবে কিনা জানিনা। মা শব্দটি একদম ছোট কিন্তু এই শব্দটির ওজন এতো ভারি যে কোন পাল্লা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।
আমরা ভাই বোনেরা ছোটবেলা থেকেই মা’কে মায়া বলে ডাকতাম। তাই হয়তো মায়ার মায়া এক মূর্হুতের জন্য ভুলতে পারিনা, অদৃশ্য থেকেও যেনো মায়া আমাকে প্রতিনিয়ত ডেকে যান। মায়ার সেই হাসি মাখা মুখটি আমার দুই নয়নে ছবির মতো ভাসে। কি জেগে থাকা কি ঘুমানো কোন সময়ই যেনো মায়ার কথা ও উপদেশগুলো মন থেকে দূরে যায়না, অন্তরের ভেতরেই থাকে। চলার পথে যত কষ্টই হোক মায়ার কথা ও উপদেশগুলো সঠিকভাবে মেনে চলার চেষ্টা করি। মা প্রায়ই বলতো আমি নাকি মায়ার থইল্লা জারা মানে সবার ছোট সন্তান। ছোট সন্তান হওয়ায় আমার প্রতি উনার অন্য রকম আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা একটু বেশিই ছিল। মা প্রায়ই বলতো আমার জন্ম আমার নানা বাড়িতে, আমি দেখতে নাকি খুব সুন্দর ছিলাম। ৫ ভাই ১ বোনের পর আমার জন্ম। অভাবের সংসার ছিল তাই আমার বাবাকে বেশ কষ্ট করেই সংসার চালাতে হতো। আমার জন্মের আমার বাবা খুব খুশি হলেন। নানা বাড়ি যাওয়ার পর আমার ছোট মামানি আমাকে দত্তক নয় একেবারে নিয়ে নিতে চাইলেন। মামানি আমার বাবাকে বললেন ভাইসাহেব আপনার তো অনেক ছেলে মেয়ে এই ছেলেটি আমাকে দিয়ে দিন। এই কথা শুনার পর আব্বা বললেন আমার সন্তান অনেক হলেও আমার কাছে বেশি হয়ে যাইনি, তুমি কি করে ভাবলে আমার সন্তানকে দিয়ে দেবো। তাৎক্ষনিক আমার মাকে বলল- চল এই বাড়িতে আর থাকবো না। ঠিকই ১৫/২০দিন বয়সের আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে এলেন। মা আমাকে সব সময় আগলে রেখেছেন, শিখিয়েছেন বর্ণমালা, দিয়েছেন জ্ঞানের আলো। আমার মা যদি আমাকে না পড়াতেন তাহলে আজ কবি সাংবাদিক আবুল বাশার শেখের জন্ম হতো না।
আমার লেখা যখনই কোন ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকায় ছাপা হতো তখন মা খুব খুশি হতেন, খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তেন। আমার মা সব সময় আমার জন্য দোয়া করতেন বলতেন তুই একদিন বড় হবি। কারো সাথে কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে গেলে মা বলতেন ‘কয়জন বড় না সয় জন বড়’। আমার মা নেই কিন্তু মায়ের কথা ও কাজগুলো আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে কাজ করে। আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের যে বিষয়টি তা হলো আমি আমার বাবা ও মায়ের মুখ থেকে শেষ কথা কিংবা উপদেশ কোনটাই শুনতে পারিনি। কেননা বাবা যখন মারা যান তখন রাত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টা আর মা যখন মারা গেলেন সে দিনটি ছিল মঙ্গলবার সময় ছিল দুপুর দেড়টা তখন আমি আমার অফিসে ছিলাম। খবর শুনেই শেষ বিদায় দিতে বাড়িতে গিয়েছি দু’জনের ক্ষেত্রেই। তাই আমি সব সময় আমার বাবা-মার কাছে ক্ষমা চাই তোমরা আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমাদের অযোগ্য সন্তান।
মন্তব্য লিখুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন।
মন্তব্য সমুহ
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।